বিভিন্ন শিলার শ্রেণীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য

বিভিন্ন শিলার শ্রেণীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য:নমস্কার বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সবাই ভালোই আছেন! আমাদের ব্লগ এ আপনাকে স্বাগতম! আজকে আমরা বিভিন্ন শিলার শ্রেণীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য নিচে দিতে যাচ্ছি। কারন এই ধরণের প্ৰশ্ন সচরাচর বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা তে আসতে দেখা যায়। তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক।

বিভিন্ন শিলার শ্রেণীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য

বিভিন্ন শিলার শ্রেণীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য

সাধারনত ভূত্বক যেসব উপাদান দ্বারা গঠিত তাকে বলে শিলা। ভূতত্ত্ববিদগনের মতে দুই বা ততোধিক খনিজদ্রবের সংমিশ্রনের এসব সৃষ্টি হয়। ভূত্বক গঠনকারী সকল কঠিন ও কোমল পদার্থের নামই হল শিলা।

শিলার শ্রেণীবিভাগ

ভূত্বক বিভিন্ন প্রকার শিলা দ্বারা গঠিত এবং প্রত্যেক প্রকার শিলা সতন্ত্র বিশিষ্ট সম্পন্ন। কোনো শিলা কাদার মতো নরম আবার কোনো শিলা গ্রানাইট পাথরের মতো শক্ত। সব ধরণের শিলাই প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি হয়েছে। উৎপত্তি ও গঠনের দিক থেকে শিলাকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে ,যেমন :-

  • আগ্নেয়শিলা ,উদাহরন :-গ্রানাইট
  • পাললিক শিলা ,উদাহরণ :-চুনাপাথর
  • রূপান্তরিত শিলা ,উদাহরণ :-মার্বেল

আগ্নেয়শিলা

সৃষ্টির আগে পৃথিবী উত্তপ্ত গ্যাসীয় পিন্ডের মত ছিল। এই গ্যাসীয় পিন্ড ক্রমোন্নয় তাপ বিকিরণ করে তরল হয়। পরে আরো তাপ বিকীরণ করে উপরিভাগ শীতল ও কঠিন আকার ধারণ করে। এভাবে গলিত অবস্থা থেকে ঘনভূত বা কঠিন হয়ে যে শিলা গঠিত হয় ,তাকে আগ্নেয়শিলা বলে। ভূ-অভ্যন্তরে উত্তপ্ত ম্যাগমা শীতল ও কেলাসিত হয়ে আগ্নেয় শিলা গঠিত হয়। অগ্নিময় অবস্থা থেকে এই শিলার সৃষ্টি বলে একে আগ্নেয়শিলা বলে। ইংরেজিতে বলাহয় igneous rock বলে। igneous শব্দের অর্থ হলো আগুন। আগ্নেয়শিলা পৃথিবীর পৃথিবীর প্রথম পর্যায়ের শিলা বলে একে প্রাথমিক শিলাও বলা হয়। এই শিলায় কোনো স্তর নেই বলে একে অন্তরীভূত শিলা বলা হয়। এই শিলায় কোনো জীবাস্ম নেই। আগ্নেয়গিরি বা ভূমিকম্পের ফলে অনেকসময় ভূ-ত্বকের দুর্বল অংশে ফাটলের সৃষ্টি হয়। তখন পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে উৎতপ্ত গলিত লাভা নির্গত হয়ে আগ্নেয়শিলার সৃষ্টি করে।এইভাবে ব্যাসল্ট ও গ্রানাইট শিলার সৃষ্টি হয়েছে।

আগ্নেয়শিলার বৈশিষ্ট্য

আগ্নেয়শিলার বিশিষ্ট গুলি নিচে দেওয়া হল :-

১.স্তরবিহীন:-উত্তপ্ত গলিত অবস্থা থেকে ঠান্ডা হয়ে জমাট বেঁধে এই জাতীয় শিলার সৃষ্টি হয় বলে এতে কোনো স্তর থাকেনা।

২.জীবাস্মবিহীন:-উত্তপ্ত গলিত পদার্থ থেকে আগ্নেয় শিলার উৎপত্তি হওয়ায় কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়না। এই কারনে এই শিলার মধ্যে কোনো জীবাস্ম পাওয়া যায়না।

৩.কেলাসিত:-উত্তপ্ত গলিত অবস্থা থেকে তাপ বিকিরণ করে এই জাতীয় শিলা তৈরি হয় বলে ক্ষেত্র বিশেষে কেলাসিত হয় বা নিদ্রিষ্ট আকারে দানা বাঁধে।

৪.অপ্রবেশ্য:-আগ্নেয় শিলার দানাগুলির মধ্যে কোনো ছিদ্র না থাকায় এই শিলায় জল প্রবেশ করতে পারেনা। তাই এই শিলা অপ্রবেশ্য।

৫.দৃহ ও সুসংহত:-উত্তপ্ত গলিত অবস্থা থেকে তাপ বিকীরণ করে উৎপন্ন হয় বলে এই শিলা সুদৃহ ও সুসংহত।

৬.প্রাচীনতম :-আগ্নেয় শিলার অন্যতম উপাদান হলো এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম শিলা। এই শিলা থেকে অন্যান্ন শিলার উৎপত্তি হয়েছে।

৭.অপেক্ষাকৃত ভারী:-আগ্নেয় শিলা অন্যান্য শিলার চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভারী।

পাললিক শিলা

পলি সঞ্চিত হয়ে যে শিলা গঠন করে ,তাকে পাললিক শিলা বলে। এই শিলার পলি সাধারণত স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। ভুপৃষ্টের প্রাথমিক শিলা গুলো যুগ যুগ ধরে রৌদ্র ,বৃষ্টি ,বায়ু প্রবাহ ,সাগর তরঙ্গ নানাপ্রকার ঘাত-প্রতিঘাতও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং খন্ড-বিখন্ড ,চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে বালি ,কাঁকর ,কাদা প্রভিতিতে পরিণত হয়। ক্ষয়িত শিলাকোনা জলস্রোত ,বায়ু এবং হিমবাহ দ্বারা পরিবাহিত হয়ে পলল বা তলানি রূপে কোনো নিম্নভূমি,হ্রদ এবং সাগরগর্ভে সঞ্চিত হতে থাকে। পরবর্তী কালে এইসব পদার্থ ভূ-গর্ভের উত্তাপেও উপরের শিলাস্তরের চাপে জমাট বেঁধে কঠিন শিলাই পরিনত হয়। পাললিক শিলা ভূ-ত্বকের মোট আয়তনের শতকরা ৫ভাগ। তবে মহাদেশীয় ভূ-ত্বকের উন্মুক্ত অংশের প্রায় ৭৫ভাগ-ই পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত।পলল বা তলানি থেকে গঠিত হয় বলে এরূপ শিলাকে পাললিক শিলা বলে। স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় বলে একে স্তরীভূত শিলাও বলে। বর্তমান সভ্যতার অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ খনিজ পদার্থ পাললিক শিলা থেকে পাওয়া যায়। যেমন -কয়লা ,প্রাকৃতিক গ্যাস ,পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি।

পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য

পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য গুলি হলো:-

১.স্তরীভূত :-পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি হলো এরা স্তরীভূত অর্থাৎ খনিজ উপাদান সমূহ স্থুল বা সুক্ষ স্তরে স্তরে বিন্যস্ত থাকে। এই স্তর গুলি সাধারণত আনুভূমিক ভাবে সজ্জিত থাকে।

২.জীবাস্ম বিশিষ্ট :-পাললিক শিলাস্তরের জীবাস্ম-এর উপস্তিতি লক্ষ করা যায়। যে সকল জীব এই শিলাঞ্চলে বাসকরে তাদের মৃতদেহ কালক্রমে পলির নিচে চাপা পড়ে। এর ফলে এদের দেহের কঠিন অংশ প্রস্তরিভুত হয়ে জীবাস্ম তে পরিণত হয়।

৩.অ-কেলাসিত :-এটি কখনও উৎতপ্ত অবস্থা থেকে শীতল হয়ে সৃষ্টি হয়না বলে এই শিলা কে অ-কেলাসিত শিলা বলা হয়।

৪.তরঙ্গ চিহ্ন:-এটি তরঙ্গ চিহ্ন যুক্ত শিলা। জলভাগের তলদেশে এই জাতীয় শিলার সৃষ্টি হয় বলে এর মধ্যে তরঙ্গ চিহ্ন বর্তমান থাকে। আবার বায়ু দ্বারা গঠিত পাললিক শিলায় ও বাতাসের দ্বারা তরঙ্গের চিহ্নের সৃষ্টি হয়।

৫.কোমলতা :- আগ্নেয় শিলার ভগ্নাংশ সঞ্চিত হয়ে পাললিক শিলার সৃষ্টি হয় বলে এই শিলা অন্য শিলা থেকে অপেক্ষাকৃত কোমল থাকে।

রূপান্তরিত শিলা

অনেক সময় প্রচন্ড তাপ ও চাপের জন্য রাসায়নিক প্ৰক্ৰিযায় আগ্নেয় ও পাললিক শিলা নতুন একধরণের পাললিক শিলায় রূপান্তরিত হয়এবং আগের তুলনায় কঠিন ও কালসীত হয়,এই শিলাকে রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন চুনাপাথর পরিবর্তিত হয়ে মার্বেল ,বেলেপাথর পরিবর্তিত হয়ে কোয়ার্টজাইট,কাদা পরিবর্তিত হয়ে শ্লেট ,গ্রানাইট পরিবর্তিত হয়ে নিলে ,কয়লা পরিবর্তিত হয়ে গ্রাফাইটে পরিণত হয়।

রূপান্তরিত শিলার গুরুত্ব পূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্ন রূপ :-

১.কেলাসিত :-তাপ ও চাপে আগ্নেয় ও পাললিক শিলার পরিবর্তন হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিনত হয় বলে এটি সাধারনত কেলসিত।

২.কাঠিন্য :-তাপ ও চাপে আগ্নেয় ও পাললিক শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিনত হয় বলে এই শিলার কাঠিন্ন অন্যান্য শিলার চেয়ে বেশি। ফলে এটি অধিকতর শক্ত ও মজবুত।

৩.জীবাস্মহীন :-পাললিক শিলার জীবাস্ম রূপান্তরের ফলে বিলুপ্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে আগ্নেয় শিলার থেকে রূপান্তরিত হলেও জীবাস্ম থাকে।

৪.সমান্তরাল :-রূপান্তরিত শিলার উপাদান গুলো সাধারণত সমান্তরাল ভাবে অবস্থান করে বলে এটি সমান্তরাল শিলা। এই সমান্তরাল ,আনুভূমিক ,তির্যক বা বক্র যে কোনো ভাবেই হতে পারে।

৫.তরঙ্গ চিত্র :-তাপ ও চাপে এই শিলা তৈরি হয় বলে তরঙ্গ চিত্র থাকেনা।

আর পড়ুন:বিভিন্ন দেশের তৃণভূমির নাম তালিকা

আর পড়ুন:ভারতের বিভিন্ন খাল তালিকা

উপসংহার

তাহলে বন্ধুরা আমাদের দেওয়া তথ্য বিভিন্ন শিলার শ্রেণীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য যদি আপনার পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানাবেন এবং এর সাথে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এবং আমাদের Facebook, Instagram এ ফলো করবেন।

Leave a Comment